রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৩ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

অন্যের হক নষ্ট না করা

মাওলানা ওয়ালী উল্লাহ:
ভুলে যাওয়া মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। এটা একটি নিয়ামতও বটে। কারণ ভুলে যাওয়ার ফলেই প্রিয়জনকে হারানোর স্মৃতি, জীবনে পাওয়া কষ্টের স্মৃতিগুলো ভুলে মানুষ সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। যদি দুঃখ-কষ্টের স্মৃতিগুলো মানুষকে প্রতিদিন বোঝার মতো বয়ে বেড়াতে হতো, তবে বেঁচে থাকা দুঃসহ হতো।

তবে, অনেক কিছু মানুষ ভোলে না, ভুলতে পারে না। তার একটি হলো কোনো মানুষের কাছ থেকে পাওয়া কষ্ট। যে কষ্ট দেয় সে অনেক সময় বেমালুম ভুলে যায়। কিন্তু যে কষ্ট পায়? সে সহজে ভোলে না।

আর তাই মানুষের মনে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। কারও গিবত বা নিন্দা করার ব্যাপারেও সতর্ক থাকুন। যেটা সত্যি কিন্তু শুনলে সে কষ্ট পাবে। আর যদি মিথ্যা হয় তবে তো সেটা আরও মারাত্মক। কারণ হয়তো আপনি ভুলে যাবেন কিন্তু সে নাও ভুলতে পারে। যদি সে আপনাকে ক্ষমা না করে তবে আপনার রব ও কিন্তু আপনাকে ক্ষমা করবেন না।

মানুষের জন্য ভুলে যাওয়া নেয়ামত বা দুর্বলতা হলেও আমাদের রব কিন্তু প্রতিটি বিষয়ে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মভাবে জ্ঞাত থাকেন। ইমাম শাফিয়ি (রহ.) তাই সতর্ক করে বলেছেন, ‘কোরআন মাজিদে একটি আয়াত আছে, যা সব গোনাহকারীদের ভীত হওয়ার কারণ হওয়া উচিত।’ তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো ‘কোন আয়াত।’ তিনি বললেন, ‘আর আপনার রব কখনো ভুলে যান না।’ -সুরা মারইয়াম : ৬৪

সুতরাং কারও হক নষ্ট করার ব্যাপারে, কারও মনে কষ্ট দেওয়ার ব্যাপারে সাবধান থাকুন। আপনি ভুলে যাবেন, সেও হয়তো ভুলে যাবে। কিন্তু আমাদের রব তিনি কখনোই ভুলবেন না। তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও কষ্ট দিয়ে ফেললে, গিবত করে ফেললেও ক্ষমা চেয়ে নিন। আপনি জানেন না কারও অশ্রু বিচারের দিনে আপনার জান্নাত লাভের অন্তরায় হবে কি না ..!

কখনো কারও গিবত করে ফেললে যদি মনে করেন তার কাছে ক্ষমা চাইলে ভালোর পরিবর্তে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে অর্থাৎ রাগারাগি বা বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে তবে তার কাছে সরাসরি ক্ষমা না চেয়ে আপনি তার জন্য সদকা করে দিতে পারেন। অন্যের কাছে তার প্রশংসা করতে পারেন। অথবা তার জন্য আন্তরিকভাবে আল্লাহর কাছে ইস্তেগফার করতে পারেন।

ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, ‘যার গিবত করা হয়েছে তাকে বিষয়টা জানাতে গেল কোনো লাভ তো হবে না বরং সমস্যা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। সে ব্যক্তি বিষয়টি জানার আগ পর্যন্ত হয়তো মানসিকভাবে শান্তিতেই ছিল। কিন্তু শোনার পরে তার মানসিক অস্থিরতা বেড়ে যেতে পারে। শোনার পর সে ধৈর্য ক্ষমতা হারিয়ে তার ক্ষতি করে ফেলতে পারে। তাই তার কাছে বলতে যাওয়া ঠিক নয়। বরং তার উচিত, মানুষের কাছে তার প্রশংসা ও সুনাম করে বদনামের ক্ষতিপূরণ করা এবং তার জন্য মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা ও দোয়া করা। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম করুণার আধার।’

হজরত হাসান বসরি (রহ.) বলেন, ‘গিবতের কাফফারা হলো, যার গিবত করেছ তার জন্য আল্লাহর কাছে ইস্তেগফার করা।’ তবুও সতর্কতা হিসেবে আমাদের উচিত গিবতের মতো মারাত্মক কবিরা গুনাহ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা। কারণ এই সহজ কিন্তু ভয়াবহ গোনাহের কারণে আমলনামা থেকে সব সওয়াব কেড়ে নিয়ে যার গিবত করা হয়েছে তাকে দিয়ে দেওয়া হবে। এই গোনাহের কারণেই জান্নাতের দরজা পর্যন্ত গিয়ে ফিরে আসা হতে পারে। আল্লাহতায়ালা সবাইকে হেফাজত করুন।

আবার নিজের ক্ষেত্রে ভাবুন। আপনার মনে যদি কেউ কষ্ট দিয়ে থাকে তাকে ক্ষমা করতে আপনার খুব কষ্ট হবে জানি। কিন্তু খুব কষ্ট হলেও শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য ক্ষমা করে দেওয়ার চেষ্টা করুন। আল গাফুর, আল গাফফার নিজে যেমন অতি ক্ষমাশীল তেমনি যারা ক্ষমা করেন তাদের তিনি ভালোবাসেন। অপছন্দের মানুষদের ক্ষমা করে দেওয়ার কারণে আপনি আল্লাহতায়ালার ক্ষমা পাওয়ার আশা যেমনিভাবে করতে পারেন, তেমনি আল্লাহতায়ালার প্রিয়ও হতে পারেন।

ভেবে দেখুন, আপনি কারও জাহান্নামের কারণ হতে চান কি না! কারণ আমাদের রব যখন যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন, কিন্তু যারা বান্দার হক নষ্ট করে, বান্দা ক্ষমা করা না পর্যন্ত আমাদের রব ও তাদের ক্ষমা করবেন না।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION